SSC Chemistry Chapter 8: রসায়ন ও শক্তি (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)
অধ্যায়-৮ : রসায়ন ও শক্তি (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)
১। প্রশ্নঃ তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ যে বিক্রিয়ার ফলে তাপ উৎপন্ন হয় সেই বিক্রিয়া হলো তাপোৎপাদী বিক্রিয়া। যেমন-রান্নাঘরের চুলায় মিথেন গ্যাসকে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা পোড়ালে তাপ উৎপন্ন হয়।
২। প্রশ্নঃ তাপহারী বিক্রিয়া বলতে কী বুঝায়?
উদাহরণসহ ব্যাখ্যা কর।
যে বিক্রিয়ার তাপ শোষিত হয় তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে। যেমন-ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে তাপ প্রয়োগে পোড়ানো হলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়।
৩। প্রশ্নঃ জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে তড়িৎ উৎপাদন
সম্ভব-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন ত্যাগ করে তাকে জারণ বলে। আর যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে বিজারণ বলে। অপরপক্ষে, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ইলেকট্রন প্রবাহের মাধ্যমে। তড়িৎ রাসায়নিক কোষে অ্যানোড ও ক্যাথোড নামের দুটি তড়িৎদ্বার থাকে। এই কোষে অ্যানোডে জারণ ঘটে এবং ক্যাথোডে বিজারণ ঘটে। যেমন-ডেনিয়েল সেলের অ্যানোডে Zn ইলেকট্রন ত্যাগ করে জিংক আয়নে (Zn2+) পরিণত হয় এবং কপার আয়ন (Cu2+) ইলেকট্রন গ্রহণ করে ক্যাথোডে Cu জমা হয়।
৪। প্রশ্নঃ তড়িৎ রাসায়নিক কোষে লবণ সেতু ব্যবহার করা হয়
কেন?
উত্তরঃ তড়িৎ
রাসায়নিক কোষ থেকে দীর্ঘ্য দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে অ্যানোড দ্রবণে ধনাত্মন আয়ন
(যেমন-ডেনিয়েল সেলে Zn2+)
বেড়ে যায় এবং ক্যাথোড দ্রবণে ঋণাত্মক আয়নের (সালফেট আয়ন) পরিমাণ বেশি হয়। ফলে দ্রবণ
দুইটির আধান নিরপেক্ষতা নষ্ট হয় এবং তড়িৎ উৎপাদন থেমে যায়। এই অসুবিধা দূর করার
জন্য লবণ সেতু ব্যবহার করা হয়। একটি U
আকৃতির কাচ নলের মধ্যে আগার-আগার নামের একটি রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে KCl লবণের দ্রবণ মিশিয়ে জেলির মতো
মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এরপর কাচ নলের দুই মুখ তুলা দিয়ে বন্ধ করে দুই দ্রবণের মধ্যে নলটিকে
উপুড় করে পরোক্ষ সংযোগ দেওয়া হয়। এই পরোক্ষ সংযোগকে লবণ সেতু বলে। এখন অ্যানোড
দ্রবণের অতিরিক্ত ধনাত্মক চার্জকে প্রশমিত করার জন্য লবণ সেতু থেকে ক্লোরাইড আয়ন (Cl-) দ্রবণে চলে আসে। আবার ক্যাথোড
দ্রবণের অতিরিক্ত ঋণাত্মক চার্জকে প্রশমিত করার জন্য লবণ সেতু থেকে K+ আয়ন দ্রবণে চলে। ফলে আনোড ও
ক্যাথোড উভয় দ্রবণের তড়িৎ নিরপেক্ষতা বজায় থাকে এবং তড়িৎ প্রবাহ নির্বিঘ্নে চলতে
থাকে।
৫। প্রশ্নঃ তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ ও গ্যালভানিক কোষের মধ্যে
দুইটি পার্থক্য লিখ।
উত্তরঃ তড়িৎ বিশ্লেষণ
কোষ ও গ্যালভানিক কোষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইটি পার্থক্য নিম্নরূপঃ
তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষ |
গ্যালভানিক কোষ |
১. যে কোষে বাইরের উৎস থেকে তড়িৎ শক্তি ব্যবহার রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে
তড়িৎ বিশ্লেষ্য কোষ বলে। |
১.যে কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় তাকে গ্যালভানিক
কোষ বলে। |
২.তড়িৎ বিশ্লেষণ কোষের অ্যানোড ধনাত্মক ও ক্যাথোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। |
২.গ্যালভানিক কোষের অ্যানোড ঋণাত্মক ও ক্যাথোড ধনাত্মক চার্জযুক্ত। |
৩.কোনো মৌল বা যৌগ উৎপাদন, ইলেকট্রোপ্লেটিং,ধাতু বিশোধন প্রভৃতি কাজে এই কোষ
ব্যবহার করা হয়। |
৩.তড়িৎ শক্তি উৎপাদন করার যন্ত্র যেমন- ব্যাটারি তৈরিতে এই কোষ ব্যবহৃত হয়। |
৬। প্রশ্নঃ এসিড মিশ্রিত পানিকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহী বলা হয় কেন?
উত্তরঃ যেসব যৌগ
গলিত বা দ্রবিভূত অবস্থায় তাদের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়ন দ্বারা তড়িৎ পরিবহন করে এবং
সেই সাথে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পরিবাহী বলা হয়। বিশুদ্ধ
পানি সাধারণত তড়িৎ পরিবহন করে না। এজন্য পানির তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধির জন্য এর
সাথে সামান্য এসিড (যেমন সালফিউরিক এসিড) যোগ করা হয়। কারণ, এসিড পানিতে বিয়োজিত
হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H+)
ও অ্যানায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে পানির তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি করে। তড়িৎ বিশ্লেষণে এই
এসিডের কোনো পরিবর্তন বা ব্যয় হয় না। এজন্য এসিড মিশ্রিত পানিকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য
পরিবাহী বলা হয়।
৭। প্রশ্নঃ পানির তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় সামান্য পরিমাণ
সালফিউরিক এসিড যোগ করা হয় কেন?
উত্তরঃ আমরা
জানি, বিশুদ্ধ পানি তড়িৎ পরিবহন করে না। এজন্য পানির তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধির জন্য
এর সাথে সামান্য পরিমাণ সালফিউরিক এসিড যোগ করা হয়। কারণ, সালফিউরিক এসিড পানিতে
বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H+)
ও সালফেট আয়ন (SO42-) উৎপন্ন
করে। এই আয়নগুলো পানিতে তড়িৎ পরিবহনে সহায়তা করে। তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় এই এসিডের
কোনো পরিবর্তন বা ব্যয় হয় না। এজন্য পানির তড়িৎ বিশ্লষণের সময় সামান্য পরিমাণ
সালফিউরিক এসিড মিশ্রিত করা হয়।
৮। প্রশ্নঃ কপার সালফেট সবল তড়িৎ বিশ্লেষ্য কেন?
উত্তরঃ আমরা জানি, যে সব লবণ জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে আয়ন উৎপন্ন করে এবং আয়নগুলো তড়িৎ পরিবহন করে তাদেরকে সবল তড়িৎ বিশ্লেষ্য বলে। কপার সালফেট একটি সবল তড়িৎ বিশ্লেষ্য। কারণ এটি জলীয় দ্রবণে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে Cu^2+ আয়ন ও সালফেট আয়ন (SO4^2-) উৎপন্ন করে এবং আয়নগুলোর মাধ্যমে তড়িৎ প্রবাহিত হয়।
৯। প্রশ্নঃ শুষ্ক কোষে ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃ শুষ্ক কোষে ক্যাথোড হিসেবে MnO2 এর ভারী আবরণযুক্ত কার্বন দন্ড এবং জিংকের তৈরি কৌটা অ্যানোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আনোডে Zn দন্ড 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয় এবং ক্যাথোডে অবস্থিত MnO2 ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়। কার্বন দন্ড আনোডে উৎপন্ন ইলেকট্রন পরিবহন করে।
১০। প্রশ্নঃ নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
উত্তরঃ নিউক্লিয়ার
বিক্রিয়া ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া |
রাসায়নিক বিক্রিয়া |
১।নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় পরমাণুর নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন মৌল সৃষ্টি
হয়। |
১।রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে না এবং নতুন মৌল সৃষ্টি হয় না। |
২।নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। |
২।এ বিক্রিয়ায় শক্তির পরিবর্তন তুলনামূলক খুবই কম। |
কোন মন্তব্য নেই