Header Ads

Header ADS

SSC Chemistry Chapter 7: রাসায়নিক বিক্রিয়া (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

 অধ্যায়-৭ : রাসায়নিক বিক্রিয়া (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

১। প্রশ্নঃ  সকল সংশ্লেষণ বিক্রিয়া সংযোজন বিক্রিয়া, কিন্তু সকল সংযোজন বিক্রিয়া সংশ্লেষণ বিক্রিয়া নয় – ব্যাখ্যা কর।  

উত্তরঃ  আমরা জানি, দুই বা ততোধিক মৌল বা যৌগ যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। আবার, সংযোজন বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌল পদার্থ যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন হলে তাকে সংশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে। নিচের উদাহরণের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়ঃ

ফেরাস ক্লোরাইডের সাথে ক্লোরিণ গ্যাস যুক্ত হয়ে ফেরিক ক্লোরাইড উৎপন্ন করে।

এই বিক্রিয়াটি সংযোজন বিক্রিয়া কিন্তু এখানে বিক্রিয়ক ফেরাস ক্লোরাইড যৌগ হওয়ায় এই বিক্রিয়াটি সংশ্লেষণ নয়। 

আবার নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন করে।


সংজ্ঞা অনুসারে এই বিক্রিয়াটি একই সাথে সংশ্লেষণ ও সংযোজন বিক্রিয়া। কারণ সংশ্লেষণ বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিক্রিয়কসমূহ মৌলিক পদার্থ এবং সংযোজন বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কসমূহ মৌলিক বা যৌগিক বা উভয়ই হতে পারে। এ কারণে সকল সংশ্লেষণ বিক্রিয়া সংযোজন বিক্রিয়া, কিন্তু সকল সংযোজন বিক্রিয়া সংশ্লেষণ বিক্রিয়া নয় ।  

২। প্রশ্নঃ  জারণ সংখ্যার ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য লিখ।   

উত্তরঃ  জারণ সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপঃ

          জারণ সংখ্যা

          যোজনী

১.যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন বা গ্রহণ করে তা হলো ঐ মৌলের যোজনী।

১.যোজনী হলো একটি মৌল অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা।

২.এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক,পূর্ণসংখ্যা,শূন্য এমন কি ভগ্নাংশও হতে পারে।

২.এটি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হয় না,এটি সর্বদা পূর্ণসংখ্যা।তবে নিস্ক্রিয় গ্যাসের যোজনী শূন্য ।

৩। প্রশ্নঃ  ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে জারণ-বিজারণ ব্যাখ্যা কর।    

উত্তরঃ  জারণ –বিজারণ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কসমূহের মধ্যে ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে। এই বিক্রিয়ার দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ হলো জারণ এবং অপর অংশটি হলো বিজারণ। জারণ–বিজারণ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক থেকে ইলেকট্রন অপসারণকে জারণ এবং বিক্রিয়ক কর্তৃক ইলেকট্রন গ্রহণকে বিজারণ বলে। এর ব্যাখ্যার জন্য NaCl এর গঠনের বিক্রিয়াটি দেখানো হলোঃ

সোডিয়াম পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক সোডিয়াম (Na+) আয়নে পরিণত হয়।এটি হলো জারণ বিক্রিয়া।আবার সোডিয়াম প্রদত্ত ইলেকট্রন ক্লোরিণ গ্রহণ করে ঋণাত্মক ক্লোরাইড (Cl- ) আয়নে পরিণত হয়।এটি হলো বিজারণ বিক্রিয়া।এভাবে উৎপন্ন ধনাত্মক সোডিয়াম (Na+) আয়ন ও ঋণাত্মক ক্লোরাইড (Cl-) আয়ন যুক্ত হয়ে NaCl গঠন করে।এখানে দেখা যাচ্ছে যে জারণ ঘটার পর বিজারণ ঘটে।অর্থাৎ জারণ ও বিজারণ বিক্রিয়া একত্রে বা যুগপৎ ঘটে।      

৪। প্রশ্নঃ K2Cr2O7 Cr এর জারণ সংখ্যা নির্ণয় কর।    

উত্তরঃ  ধরি, K2Cr2O7 Cr এর জারণ সংখ্যা x

এখানে K এর জারণ মান +1, O এর জারণ মান -2

অতএব, (+1)×2 + x×2 + (-2) × 7 = 0

    বা, 2+  2x – 14 = 0

              বা,  2x = 12

              বা, x = 6

অতএব, K2Cr2O7 Cr এর জারণ সংখ্যা + 6

৫। প্রশ্নঃ সকল তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের প্রশমন তাপ ধ্রুবক কেন? ব্যাখ্যা কর।    

উত্তরঃ  এসিড ও ক্ষার পরস্পরের সাথে বিক্রিয়া 1 মোল পানি উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তাকে প্রশমন তাপ বলে। তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের বিক্রিয়ায় সর্বদা নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় এবং এর মান -57.34 kJ /mol 

 যেমন, তীব্র এসিড HCl ও তীব্র ক্ষার NaOH এর প্রশমন বিক্রিয়া নিম্নরূপঃ

এখানে এসিড ও ক্ষার সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয়। উৎপন্ন H+ আয়ন ও OH-  আয়ন পরষ্পরের সাথে যুক্ত হয়ে পানি এবং 57.34 kJ তাপ উত্পন্ন করে । কিন্তু দ্রবণে উপস্থিত Na+Cl-  আয়নদ্বয় বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এরা  দর্শক আয়ন হিসেবে অবস্থান করে। যেহেতু সকল তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের মধ্যে একই বিক্রিয়া ঘটে অর্থাৎ H+ আয়ন ও OHআয়ন পরষ্পরের সাথে বিক্রিয়া করে এক মোল পানি এবং একই পরিমাণ তাপ উত্পন্ন করে। তাই সকল তীব্র এসিড ও তীব্র ক্ষারের প্রশমন তাপ ধ্রুবক এবং এর মান  -57.34 kJ/mol ।    

৬। প্রশ্নঃ  CaCO3 এর সাথে লঘু H2SO4 বিক্রিয়া শেষ পর্যন্ত অগ্রসর হয় না কেন? ব্যাখ্যা কয়া। 

উত্তরঃ লঘু সালফিউরিক এসিডের সাথে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম সালফেট উৎপন্ন হয়, কিন্তু উৎপন্ন ক্যালসিয়াম সালফেট অদ্রবণীয় বলে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের উপর আবরণ সৃষ্টি করে। ফলে কিছু সময় বিক্রিয়া চলার পর ক্যালসিয়াম কার্বনেট সালফিউরিক এসিডের সংস্পর্শে আসতে পারে না এবং এক পর্যায়ে বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে  ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়া শেষ পর্যন্ত অগ্রসর হয় না।


৭। প্রশ্নঃ  পিঁপড়া বা মৌমাছির কামড়ে ক্ষতস্থানে ব্যথা উপসমের জন্য চুন বা মধু ব্যবহার করা কেন? 
উত্তরঃ পিঁপড়া বা মৌমাছি পোকা কামড়ালে ক্ষত স্থানে জ্বালা যন্ত্রণা করে। এ যন্ত্রণার কারণ হলো পিঁপড়ার মুখ বা মৌমাছির হুলে এক ধরণের এসিড (ফরমিক এসিড) থাকে  যা জ্বালা-যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। আমরা জানি, এসিডকে ক্ষার বা ক্ষারক দ্বারা প্রশমিত করা যায়। আর সহজ লভ্য ক্ষারক হলো চুন ও মধু। এজন্য ক্ষতস্থানে চুন বা মধু প্রয়োগ করলে তা এসিডকে প্রশমিত করে ব্যথা উপসম হয়। ফলে জ্বালা-যন্ত্রণা বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য পিঁপড়া বা মৌমাছি পোকা কামড়ালে ক্ষত স্থানে চুন বা মধু ব্যবহার করলে ব্যথা উপসম হয়।

                 

৮। প্রশ্নঃ  পাকস্থলীর অম্লতা দূর করার জন্য এন্টাসিড খাই কেন? 

উত্তরঃ মানুষের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় অনেক সময় পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) গ্যাস তৈরি হয়। অতিরিক্ত HCl কে প্রশমিত করার জন্য রোগীকে ডাক্তার এন্টাসিড জাতীয় ওষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। এন্টাসিড হলো Mg(OH)2 Ca(OH)2 এর মিশ্রণ। এই ক্ষারক দুটি অতিরিক্ত HCl কে প্রশমিত করে। ফলে রোগী এসিডিটি থেকে মুক্তি পান। HCl ও এন্টাসিডে উপস্থিত ক্ষারকের বিক্রিয়া নিম্নরূপঃ

৯। প্রশ্নঃ  উভমুখী বিক্রিয়া বলতে কী বুঝায়?

উত্তরঃ যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয় এবং একই সাথে উৎপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে বিক্রিয়কে পরিণত হয় তাকে উভমুখী বিক্রিয়া বলে। যেমন, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে উত্তপ্ত করলে তা বিয়োজিত হয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাস ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। আবার উৎপন্ন পদার্থসমূহকে শীতল করলে উপাদানগুলো পুনরায় সংযোজিত হয়ে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড তৈরি হয়। এই বিক্রিয়াটি একটি উভমুখী বিক্রিয়া। উভমুখী বিক্রিয়াকে দু’টি উভমুখী অর্ধ তীর চিহ্ন দ্বারা নির্দেশ করা হয়।

১০। প্রশ্নঃ রাসায়নিক সাম্যাবস্থা একটি গতিশীল অবস্থা-ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ উভমুখী বিক্রিয়ার সন্মুখবর্তী বিক্রিয়ার হার ও পশ্চাদবর্তী বিক্রিয়ার হার সমান হলে বিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় উপনীত হয়। আপাত দৃষ্টিতে সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়াটি স্থির মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে বিক্রিয়াটি স্থির নয়, এটি গতিশীল। এ অবস্থায় একক সময়ে যে পরিমাণ বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হয়, ঐ একই সময়ে একই পরিমাণ উৎপাদ বিক্রিয়কে পরিণিত হয়। অর্থাৎ এ অবস্থায় প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো বিক্রিয়ক অণু উৎপাদে পরিণত হয়, একই সময়ে উৎপাদ বিক্রিয়া করে ঠিক ততগুলো বিক্রিয়ক অণু উৎপন্ন করে। তাই রাসায়নিক সাম্যাবস্থায় একটি গতিশীল অবস্থা, স্থির অবস্থা নয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.