Header Ads

Header ADS

SSC Chemistry Chapter 5: রাসায়নিক বন্ধন (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

              অধ্যায়-৫:রাসায়নিক বন্ধন (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

১। প্রঃ  “নাইট্রোজেনের যোজনী ও যোজ্যতা ইলেকট্রন ভিন্ন” – ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আমরা জানি, কোনো মৌলের একটি পরমাণুর সাথে অন্য মৌলের পরমাণু যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজনী বলে। কোনো মৌলের যোজনী ঐ মৌলের বাইরের শক্তিস্তরে উপস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যা বা বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা বা অষ্টক পূর্ণ হতে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন সংখ্যার সমান হয়। কিন্তু যোজ্যতা ইলেকট্রন হলো বাইরের শক্তিস্তরে উপস্থিত মোট ইলেকট্রন সংখ্যা।

N এর ইলেকট্রন বিন্যাস-

    N(7)  - 1s2 2s2 2px1 2py1 2pz1 

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে,বাইরের শেলে p অরবিটালে 3টি অযুগ্ম ইলেকট্রন রয়েছে। ফলে নাইট্রোজেন একযোজী কোনো মৌলের তিনটি পরমাণুর সাথে যুক্ত হয়। এ কারণে N এর যোজনী 3 । অপরপক্ষে, এর সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে 5টি ইলেকট্রন রয়েছে । তাই এর যোজ্যতা ইলেকট্রন 5 । অতএব বলা যায়, নাইট্রোজেনের যোজনী ও যোজ্যতা ইলেকট্রন ভিন্ন।


২। প্রঃ  অক্সিজেনের যোজনী ও যোজ্যতা ইলেকট্রন একই নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আমরা জানি, কোনো মৌল একটি পরমাণুর সাথে অন্য মৌলের পরমাণু যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকে যোজনী বলে। তবে কোনো মৌলের বাইরের শেলে উপস্থিত ইলেকট্রন সংখ্যা বা বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা বা অষ্টক পূর্ণ হতে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন সংখ্যা দ্বারা ঐ কোনো মৌলের যোজনী নির্ধারণ হয়। কিন্তু যোজ্যতা ইলেকট্রন হলো বাইরের শক্তিস্তরে উপস্থিত মোট ইলেকট্রন সংখ্যা।

অক্সিজেনের ইলেকট্রন বিন্যাস-

    O (8)  - 1s2 2s2 2px2 2py1 2pz1 

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, বাইরের শেলে p অরবিটালে 2টি অযুগ্ম ইলেকট্রন রয়েছে বা অষ্টক পূর্ণ হতে আরো 2টি ইলেকট্রন প্রয়োজন । তাই অক্সিজেনের যোজনী 2 । অপরপক্ষে, এর সবচেয়ে বাইরের দ্বিতীয় শক্তিস্তরে 4টি ইলেকট্রন রয়েছে। এজন্য এর যোজ্যতা ইলেকট্রন 4 । উল্লেখিত কারণে অক্সিজেনের যোজনী ও যোজ্যতা ইলেকট্রন এক নয়।


৩। প্রঃ  সালফার পরিবর্তনশীল যোজনী প্রদর্শন করে কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ কোনো মৌলের একাধিক যোজনী থাকলে সেই মৌলের যোজনীকে পরিবর্তনশীল যোজনী বলে। যেমন- সালফার পরিবর্তনশীল যোজনী প্রদর্শন করে। সালফারের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। নিম্নে স্বাভাবিক ও উত্তেজিত অবস্থায় সালফারের ইলেট্রন বিন্যাস ব্যাখ্যা করা হলোঃ  

 S(16)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p4 3d0         

 S(16)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3px2 3py1 3pz1     (যোজনী 2)

*S(16)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3px1 3py1 3pz1 3dxy1  (যোজনী 4)

*S(16)  - 1s2 2s2 2p6 3s1 3px1 3py1 3pz1  3dxy1 3dyz1  (যোজনী 6 )  

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, বাইরের তৃতীয় শেলে s অরবিটালে 2টি ও  p অরবিটালে 4 টি ইলেকট্রন রয়েছে এবং d অরবিটাল ফাঁকা আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় বাইরের শেলে p অরবিটালে 2টি বিজোড় ইলেকট্রন রয়েছে। তাই এ অবস্থায় সালফারের যোজনী 2 । আবার উত্তেজিত অবস্থায় 3px অরবিটাল থেকে 1টি ইলেকট্রন d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয়, ফলে বিজোড় ইলেকট্রন সংখ্যা 4 হয় বলে যোজনী 4 । অধিকতর উত্তেজিত অবস্থায় 3s অরবিটাল থেকে একটি 1টি ইলেকট্রন আরেকটি d অরবিটালে স্থানান্তরিত হওয়ায় এখানে যোজনী । উল্লেখিত কারণে সালফার পরিবর্তনশীল যোজনী প্রদর্শন করে।


৪। প্রঃ SO4 2- একটি যৌগমূলক -ব্যাখ্যা কর।                                                              

উত্তরঃ আমরা জানি, যৌগমূলক হলো একাধিক মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট পরমাণুগুচ্ছ যা একটি আয়ন বা পরমাণুর ন্যায় আচরণ করে। এখানে SO42- মূলকটিতে একটি সালফার পরমাণু ও চারটি অক্সিজেন পরমাণু রয়েছে, যা এটি একটি পরমাণুর ন্যায় আচরণ করে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে ।

                     Zn + H2SO4 = ZnSO4 + H2

বিক্রিয়া থেকে দেখা যায় যে, বিক্রিয়ক ও উৎপাদে সালফেট (SO42- ) মূলকের কোনো পরিবর্তন হয়নি । সুতরাং SO42- একটি যৌগমূলক।  

৫। প্রঃ HF একটি পোলার যৌগ -ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আমরা জানি, যে সমযোজী যৌগের অণুতে আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক চার্জ সৃষ্টি হয় তাকে পোলার যৌগ বলে। HF একটি পোলার যৌগ। এটি সর্বাধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল F ও তুলনামূলক কম তড়িৎ ঋণাত্মক (অধিক তড়িৎ ধনাত্মক) মৌল H দ্বারা গঠিত। ফ্লোরিন ও হাড্রোজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য অধিক হওয়ায় H – F বন্ধনে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন যুগলকে F পরমাণু নিজের দিকে কিছুটা বেশি আকর্ষণ করে। ফলে F পরমাণুতে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ এবং H  পরমাণুতে আংশিক ধনাত্মক চার্জ উৎপন্ন  হয়।

এভাবে HF অণুতে H প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক ও F প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট দুটি মেরু বা পোল সৃষ্টি হয়। যে সব যৌগে এভাবে দুটি মেরু বা পোল সৃষ্টি হয় তাদেরকে পোলার যৌগ বলে। এজন্য HF একটি পোলার যৌগ।     


৬। প্রঃ H2O একটি পোলার যৌগ -ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ  আমরা জানি, আংশিক ধনাত্মক ও আংশিক ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট সমযোজী যৌগই হলো পোলার যৌগ। H2O একটি সমযোজী পোলার যৌগ। পানির অণু তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল অক্সিজেন ও তুলনামূলক কম তড়িৎ ঋণাত্মক (অধিক তড়িৎ ধনাত্মক) মৌল H দ্বারা গঠিত। হাইড্রোজেনের তুলনায় অক্সিজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বেশি বলে H – O বন্ধনে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন যুগলকে O পরমাণু নিজের দিকে কিছুটা টেনে নিয়ে যায়। ফলে O পরমাণুতে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ এবং H  পরমাণুতে আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি  হয়।

এভাবে পানির অণুতে H প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক ও O প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক আধানবিশিষ্ট মেরু বা পোল সৃষ্টি হয়। যে সব যৌগে এভাবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক মেরু বা পোল সৃষ্টি হয় তাদেরকে পোলার যৌগ বলে। এজন্য H2O একটি পোলার যৌগ।   


৭। প্রঃ অ্যালুমিনিয়াম বিদ্যুৎ সুপরিবাহী কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ অ্যালুমিনিয়াম বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। এর কারণ হলো অ্যালুমিনিয়ামের স্ফটিকে মুক্তভাবে বিচরণশীল ইলেকট্রন বিদ্যমান। অ্যালুমিনিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস [ Al(13)- 1s2 2s2 2p6 3s2 3p1 ] থেকে দেখা যায় যে, এর সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে 3টি ইলেকট্রন আছে, যা ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এই ত্যাগকৃত ইলেট্রনগুলো কোনো একটি পরমাণুর অধীনে না থেকে সমগ্র ধাতব খন্ডে বিচরণ করে। আর এই সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনগুলোই তড়িৎ পরিবহন করে থাকে। এজন্য অ্যালুমিনিয়াম তড়িৎ সুপরিবাহী। 


৮। প্রঃ হীরক বিদ্যুৎ অপরিবাহী, গ্রাফাইট বিদ্যুৎ পরিবাহী কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ হীরক ও গ্রাফাইট উভয়ই একই মৌল কার্বনের দুটি রূপভেদ। যদিও উভয় একই পরমাণু দ্বারা গঠিত, তবে এদের সমযোজী বন্ধনের গঠনে ভিন্নতার দরুণ গ্রাফাইট তড়িৎ পরিবাহী ও হীরিক তড়িৎ অপরিবাহী।   গ্রাফাইটের গঠনে যখন কার্বন পরমাণু সজ্জিত হয়, তখন এর যোজ্যতা স্তরের চারটি ইলেকট্রনের মধ্যে তিনটি  ইলেকট্রন সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং অন্য একটি ইলেকট্রন মুক্তভাবে বিচরণ করে। এ মুক্ত ও সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনের কারণেই গ্রফাইটের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়। অপরপক্ষে, হীরকের গঠনের ক্ষেত্রে কাবর্নের যোজ্যতা স্তরের চারটি  ইলেকট্রনই সমযোজী বন্ধনে যুক্ত হয়। ফলে এতে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। এজন্য হীরক তড়িৎ অপরিবাহী। 


৯। প্রঃ Mg Mg2+ এর আকার ভিন্ন হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ Mg Mg2+ এর আকার ভিন্ন হওয়ার কারণ ইলেকট্রন বিন্যাসের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়।

 Mg(12) - 1s2 2s2 2p6 3s2  

 Mg2+(12) - 1s2 2s2 2p6         

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, Mg এর 12টি ইলেকট্রন তিন স্তরে বিন্যস্ত, কিন্তু ম্যাগনেসিয়াম আয়নের (Mg2+) 10টি ইলেকট্রন দুই স্তরে বিন্যস্ত, যদিও উভয়ের মধ্যেই 12টি প্রোটন রয়েছে। আমরা জানি, ইলেকট্রন বিন্যাসে শক্তিস্তর সংখ্যা বেশি হলে পরমাণু বা আয়নের আকার বড় হয়। তাই Mg এর আকার ম্যাগনেসিয়াম আয়ন (Mg2+) অপেক্ষা বড়, অর্থাৎ Mg Mg2+ এর আকার ভিন্ন।


১০। প্রঃ Na Na+ আয়নের আকারের ভিন্নতা দেখা যায় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ Na Na+ আয়নের আকারের ভিন্নতার কারণ ইলেকট্রন বিন্যাসের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়।

 Na (12) - 1s2 2s2 2p6 3s1  

 Na+ (12) - 1s2 2s2 2p6         

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, Na এর 11টি ইলেকট্রন তিন স্তরে বিন্যস্ত, কিন্তু সোডিয়াম আয়নের (Na+) 10টি ইলেকট্রন দুই স্তরে বিন্যস্ত, যদিও উভয়ের মধ্যেই 11টি প্রোটন রয়েছে। আমরা জানি, ইলেকট্রন বিন্যাসে শক্তিস্তর সংখ্যা বেশি হলে পরমাণু বা আয়নের আকার বড় হয়। তাই Na এর আকার সোডিয়াম আয়ন (Na+) অপেক্ষা বড়। উল্লেখিত কারণে Na Na+ আয়নের আকারের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।   

  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.