Header Ads

Header ADS

SSC Chemistry Chapter 4: পর্যায় সারণি (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

 অধ্যায়-৪:পর্যায় সারণি (অনুধাবনমূলক প্রশ্ন-উত্তর)

১। প্রঃ মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণি ব্যাখ্যা কর।                                                                

উত্তরঃ মৌলসমূহকে সাজানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর 1869 সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্ডেলিফ সকল মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করে একটি সূত্র প্রদান করেন। সূত্রটি হলোঃ “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।”                  

এ সূত্রানুসারে তিনি তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত 63টি মৌলকে 12টি আনুভূমিক সারি এবং 8টি খাড়া কলামের একটি ছকে পারমাণবিক ভর বৃদ্ধি অনুসারে সাজান। এই ছকে তিনি দেখান যে, একই কলাম বরাবর সকল মৌলের ধর্ম একই রকমের এবং একটি সারির প্রথম মৌল থেকে শেষ পর্যন্ত মৌলসমূহের ধর্ম ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন ঘটে। এই ছকের নাম দেওয়া হয় পর্যায় সারণি । সে সময় পর্যন্ত 63টি মৌল আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে বেশ কিছু ফাঁকা স্থান থেকে যায়। তিনি এই ফাঁকা ঘরগুলোর জন্য কিছু মৌলের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা পরবর্তীতে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। এটি মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির একটি বড় সাফল্য। 


২। প্রঃ পর্যায় সারণিতে K এর অবস্থান কোথায়?

উত্তরঃ কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে সহজেই মৌলটি পর্যায় সারণির কোন গ্রুপ ও কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নির্ণয় করা যায়। K এর ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে পর্যায় সারণিতে এর অবস্থান নির্ণয় করা যায়।

    K(19)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 4s1

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, ইলেকট্রনগুলো চারস্তরে বিন্যস্ত বা সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তর 4, তাই এর অবস্থান 4 নম্বর পর্যায়ে।

আবার বাইরের প্রধান শক্তিস্তরে শুধু s অরবিটালে 1টি ইলেকট্রন রয়েছে, তাই এটি 1 নম্বর গ্রুপে বা শ্রেণিতে অবস্থিত।

অতএব, পর্যায় সারণিতে K এর অবস্থান হলো 4 নম্বর পর্যায়ে ও 1 নম্বর গ্রুপে।


৩। প্রঃ পর্যায় সারণিতে Al এর অবস্থান নির্ণয় কর।  

উত্তরঃ কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে সহজেই ঐ মৌলের পর্যায় সারণিতে অবস্থান নির্ণয় করা যায়। Al এর ইলেকট্রন বিন্যাস-

    Al(13)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p1

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, ইলেকট্রনগুলো তিনস্তরে বিন্যস্ত বা সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তর 3, তাই এর অবস্থান 3 নম্বর পর্যায়ে।

আবার বাইরের প্রধান শক্তিস্তরে s অরবিটালে 2 টি ও p অরবিটালে 1টি (মোট 2+1 = 3 টি) ইলেকট্রন রয়েছে, তাই এটি 3 + 10 =13 নম্বর গ্রুপে বা শ্রেণিতে অবস্থিত।

অতএব, পর্যায় সারণিতে Al এর অবস্থান হলো 3 নম্বর পর্যায়ে ও 13 নম্বর গ্রুপে।


৪। প্রঃ Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ  Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস-

    Cr (24)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3 d5 4s1

Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। সাধারণ নিয়মে Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস হওয়ার কথা ছিল 3d4 4s2 । কিন্তু d অরবিটাল অর্ধপূর্ণ (d5 ) ও পূর্ণ (d10) অবস্থায় অধিক স্থিতিশীল । এ কারণে স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে 4s অরবিটাল থেকে 1টি ইলেকট্রন 3d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয় এবং 3 d5 গঠন লাভ করে স্থিতিশীল হয়। তাই Cr এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম।


৫। প্রঃ Ag এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ  Ag এর ইলেকট্রন বিন্যাস -

    Ag(47)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6 3d10 4s2 4p6 4 d10 5s1

Ag এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। সাধারণ নিয়মে Ag এর ইলেকট্রন বিন্যাস হওয়ার কথা ছিল 4 d9 5s2 । কিন্তু d অরবিটাল অর্ধপূর্ণ (d5) ও পূর্ণ (d10) অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল । এ কারণে স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে 5s অরবিটাল থেকে 1টি ইলেকট্রন 4 d অরবিটালে স্থানান্তরিত হয় এবং 4 d10 গঠন লাভ করে। তাই Ag এর ইলেকট্রন বিন্যাস সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম।


৬। প্রঃ  Mg কে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয় কেন?  

উত্তরঃ যে সব ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্ষার উৎপন্ন করে তাদের ক্ষার ধাতু বলে। আর ক্ষার ধাতুসমূহের মধ্যে যাদের বিভিন্ন যৌগ মাটিতে পাওয়া যায় তাদেরকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। Mg এর কিছু কিছু যৌগ মাটিতে পাওয়া যায় বলে Mg কে মৃৎক্ষার ধাতু বলে।  


৭। প্রঃ মৌলের ধাতব ধর্ম বলতে কী বোঝায়?                                                                 

উত্তরঃ যে সকল মৌল চকচকে,আঘাত করলে ধাতব শব্দ করে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী তাদেরকে সাধারণত ধাতু বলা হয়। আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় সে সব মৌলই ধাতু । ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগের এই ধর্মকে ধাতব ধর্ম বলে। 

যে মৌলের পরমাণু যত সহজে ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারে সেই মৌলের ধাতব ধর্ম তত বেশি। পর্যায় সারণিতে যে কোনো পর্যায়ে বাম থেকে ডান দিকে মৌলের ধাতব ধর্ম হ্রাস পায়।


৮। প্রঃ পর্যায় সারণির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন যে, অনেকগুলো মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম পৃথকভাবে মনে রাখা কঠিন। তাছাড়া এসব মৌলের ধর্মের মধ্যে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- Na K এর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকমের। বিজ্ঞানীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন লেন্ডেলিফ। তিনি একই ধর্মবিশিষ্ট মৌলসমূহকে একই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ছক তৈরি করেন। এই ছকের নাম দেওয়া হয় পর্যায় সারণি । ফলে কোনো একটি গ্রুপের একটি মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে জানলে, ঐ গ্রুপের বাকী মৌলগুলো সম্পর্কেও সহজেই জ্ঞান লাভ করা যায়। এভাবে সকল মৌলর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সহজে জ্ঞান লাভ করাই হলো পর্যায় সারণি মূল উদ্দেশ্য।


৯। প্রঃ আধুনিক পর্যায় সারণির দুটি ত্রুটি ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ আধুনিক পর্যায় সারণির অনেক সুবিধা থাকলেও এর কিছু ত্রুটি রয়েছে। এর দুটি উল্লেখযোগ্য ত্রুটি বর্ণনা করা হলোঃ

(ক) হাইড্রোজেনের অবস্থানঃ হাইড্রোজেনকে পর্যায় সারণির 1 নম্বর গ্রুপের প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে। হাইড্রোজেন একটি অধাতু ও গ্যাসীয় পদার্থ। কিন্তু এই গ্রুপের অন্য মৌলগুলো তীব্র ক্ষার ধাতু ও কঠিন পদার্থ। হাইড্রোজেনকে ভিন্নধর্মের মৌলের সাথে 1 নম্বর গ্রুপে স্থান দেওয়া যথাযথ হয়নি।

(খ) শূন্য স্থানঃ পর্যায় সারণির 1 নম্বর পর্যায়ে 16টি এবং 2 3 নম্বর পর্যায়ে 10টি করে ফাঁকা স্থান রয়েছে, যা মৌলসমূহের ধারাবাহিক সজ্জিতকরণকে ক্ষুন্ন করেছে।    


১০। প্রঃ হ্যালোজেন বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ হ্যালোজেন শব্দের অর্থ লবণ উৎপাদনকারী এবং এর মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ। পর্যায় সারণির 17 নং গ্রুপের ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন, অ্যাস্টাটিন এবং টেনেসিন এই 6টি মৌল হলো হ্যালোজেন। হ্যালোজেন মৌলসমূহের সাথে ধাতু যুক্ত হয়ে লবণ গঠন করে। যেমন-Cl এর সাথে Na যুক্ত হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) বা খাদ্য লবণ গঠিত হয়।


১১। প্রঃ  He নিস্ক্রিয় গ্যাস – ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর ইলেকট্রন বিন্যাস (1s2) অনুসারে একে পর্যায় সারণির গ্রুপ-2 এ স্থান দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গ্রুপ-2 এর মৌলসমূহ তীব্র তড়িৎ  ধনাত্মক ও মৃৎক্ষার ধাতু। হিলিয়াম পরমাণুতে 2টি ইলেকট্রন থাকলেও এটি অন্য কোনো পরমাণুর সাথে এমন কি নিজ পরমাণুর সাথেও ইলেকট্রন আদান –প্রদান বা শেয়ার করে না, তাই এটি কোনো যৌগ গঠন করে না, প্রকৃতিতে একক বিচ্ছিন্ন পরমাণু হিসেবে অবস্থান করে। হিলিয়ামের এই ধর্মগুলো গ্রুপ-18 এর অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন,আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন ইত্যাদির সাথে মিলে যায়। তাই এর অবস্থান 18 নম্বর গ্রুপে এবং এটি একটি নিষ্ক্রিয় মৌল। 


১২। প্রঃ He কে গ্রুপ 2 এ রাখা হয়নি কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ হিলিয়ামের ইলেকট্রন বিন্যাস (1s2) অনুসারে একে পর্যায় সারণির গ্রুপ-2 এ স্থান দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গ্রুপ-2 এর মৌলসমূহ তীব্র তড়িৎ  ধনাত্মক ও মৃৎক্ষার ধাতু। হিলিয়াম পরমাণুতে 2টি ইলেকট্রন থাকলেও এটি অন্য কোনো পরমাণুর সাথে এমন কি নিজ পরমাণুর সাথেও ইলেকট্রন আদান –প্রদান বা শেয়ার করে না, তাই এটি কোনো যৌগ গঠন করে না, প্রকৃতিতে একক বিচ্ছিন্ন পরমাণু হিসেবে অবস্থান করে। হিলিয়ামের এই ধর্মগুলো গ্রুপ-18 এর অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাস নিয়ন,আর্গন, ক্রিপটন, জেনন, রেডন ইত্যাদির সাথে মিলে যায়। তাই He কে গ্রুপ 2 এ না রেখে 18 নম্বর গ্রুপে স্থান দেওয়া হয়েছে।  


১৩। প্রঃ Ne মৌলটি যৌগ গঠন করতে আগ্রহী নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।                                       

উত্তরঃ  Ne একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর অবস্থান অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সাথে পর্যায় সারণির 18 নম্বর গ্রুপে। এর ইলেকট্রন বিন্যাস নিম্নরূপঃ Ne(10)  - 1s2 2s2 2p6  

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে ইলেকট্রন দ্বারা অষ্টকপূর্ণ (2s2 2p6) থাকে যা অত্যন্ত সুস্থিত । এই সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস ভাঙতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় Ne অন্য কোনো পরমাণুর সাথে ইলেকট্রন আদান-প্রদান বা শেয়ার করে না। তাই Ne  রাসায়নিক বন্ধন গঠনে তথা যৌগ গঠনে আগ্রহী নয়।   


১৪। প্রঃ Ar  নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ  Ar একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এর অবস্থান অন্যান্য নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সাথে পর্যায় সারণির 18 নম্বর গ্রুপে। এর ইলেকট্রন বিন্যাস নিম্নরূপঃ      Ar(18)  - 1s2 2s2 2p6 3s2 3p6

ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে ইলেকট্রন দ্বারা অষ্টকপূর্ণ থাকে। এই ইলেকট্রনীয় কাঠামো ভাঙতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। এজন্য অষ্টকপূর্ণ কাঠামো অত্যন্ত স্থিতিশীল। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় Ar অন্য কোনো মৌলের সাথে ইলেকট্রন আদান-প্রদান বা শেয়ার করে না, অর্থৎ কোনো বন্ধন গঠনে বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। Ar এতই নষ্ক্রিয় যে, এর দুটি পরমাণু নিজেদের মধ্যেও যুক্ত হয় না, বরং এটি একক বিচ্ছিন্ন পরমাণু হিসেবে প্রকৃতিতে অবস্থান করে। এজন্য Ar কে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.